বিআরটিএতে রাতারাতি পরিবর্তন হয় বদলী আদেশ, আছে বাণিজ্যের অভিযোগ

Passenger Voice    |    ১১:৪০ এএম, ২০২১-০২-০৫


বিআরটিএতে রাতারাতি পরিবর্তন হয় বদলী আদেশ, আছে বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনার কারনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বদলী ও পদায়ন বন্ধ ছিল বেশ কয়েকমাস ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে বিআরটিএর বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতি, জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনসহ বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলী করেছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। তবে এই বদলী ও পদায়নে কতিপয় কর্মকর্তাকে বিআরটিএর স্বার্থে বিভিন্ন সার্কেলে বদলী করা হলেও অনেক কর্মকর্তা বদলীকৃত স্থানে যোগদান না করে কব্জির জোড়ে তাদের পছন্দের স্থানে বদলী হওয়ায় অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক কর্মকর্তা প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, বিআরটিএর কর্মকর্তাদের বদলী ও পদায়নের ক্ষেত্রে সরকার ২০১৮ সালে ক, খ, গ, ঘ ক্যাটাগড়ি নির্ধারণ করে একটি নীতিমালা গঠন করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল। তবে সেই নীতিমালা না মানার বিষয়ে খোধ অভিযোগ বিআরটিএ প্রশাসন বিভাগের দিকে। 

সূত্র বলছে ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক মো. আল ফয়সাল (পরিচিতি নং- ২০১৪২০০০৫২) তার বিরুদ্ধে উক্ত সার্কেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা গ্রহনে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। গত ১০ জানুয়ারী ৩৫.০৩.০০০০.০০১.১৯.১০৬.২০-১০৬ নং স্বারকমূলে এই কর্মকর্তাকে বিআরটিএর গোপালগঞ্জ সার্কেলে বদলী করা হয়। তবে তিনি বিআরটিএর এই বদলী আদেশ মাত্র ২৪ ঘন্টার মাথায় পরিবর্তন করে ১১ জানুয়ারী ৩৫.০৩.০০০০.০০১.১৯.১০৬.২০-১১৯ নং স্বারকমূলে আবারও বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের মেরামত ও কনডেমনেশন শাখায় বদলী হয়ে যায়।

বিআরটিএ টাঙ্গাইল সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলাম (পরিচিতি নং-১৯৯৩৩২০০৩৭) । এই কর্মকর্তাকেও একই আদেশে গত ১০ জানুয়ারী বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের মেরামত ও কনডেমনেশন শাখায় বদলী করে কর্তৃপক্ষ। তবে ২৪ ঘন্টায় এই আদেশ পরিবর্তন করে ১১ জানুয়ারির একই আদেশে তার পছন্দের সার্কেল গাজিপুর জেলায় তাকে বদলী করে। 

বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো সার্কেল-১ এর মোটরযান পরিদর্শক বশির উদ্দিন আহম্মেদ (পরিচিতি নং-২০০৪৩২০০৪১) তার বিরুদ্ধে এই সার্কেলে বেশ কয়েক কোটি টাকা অবৈধ ঘুষ বাণ্যিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এই টাকায় ঢাকা শহরে বাড়ী, গাড়ি ও মার্কেট নির্মানের অভিযোগে গত কিছুদিন মিডিয়ায় সরগরম ছিল। বিআরটিএ ভাবমুর্তি রক্ষায় এই দুর্নীতিবাজকে বিআরটিএর নোয়াখালী সার্কেলে বদলী করে কর্তৃপক্ষ। নোয়াখালীতে তিনি যোগদান না করে, সপ্তাহ শেষে বদলী আদেশ পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। গত জানুয়ারির ১০ তারিখে তার পছন্দের বিআরটিএর টাঙ্গাইল সার্কেলে বদলী করে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। 

বিআরটিএ নাটোর সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক মো. সাইদুর রহমান (পরিচিতি নং-১৯৯২৩২০০১৮)। এই কর্মকর্তাকে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর ৩৫.০৩.০০০০.০০১.১৯.১০৬.২০.৩৪১৫ নং স্বারকমূলে ঢাকা মেট্রো সার্কেল-১ এ বদলী করা হয়। তবে সপ্তাহ শেষে ১৩ ডিসেম্বরের ৩৫.০৩.০০০০.০০১.১৯.১০৬.২০.৩৫২৬ নং আদেশে তিনি হয়ে যান  বিআরটিএ জয়পুরহাটের সহকারী পরিচালক।  এভাবেই বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের বদলী ও পদায়ন গুলো রাতারাতি পরিবর্তন হয়ে যায়। 

বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মেরাজুল ইসলাম (পরিচিত নং-২০১৭৩২০১৩১) । তাকে বিআরটিএ নওগাঁ সার্কেলে বদলী করেছিল কর্তৃপক্ষ কবে সেটাও কয়েকদিন পরে পরিবর্তন হয়ে অন্য এক আদেশে বিআরটিএ মাদারীপুর-শরীয়তপুর সার্কেল হয়ে যায়। 

অন্যদিকে ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাত্র তিন বছরের অভিজ্ঞতা আছে এমন মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট আবু বকর সিদ্দিক (পরিচিতি নং-২০১৭৩২০১২২) কে ৭ জানুয়ারি ৩৫.০৩.০০০০.০০১.১৯.১০৬.২০.৬৫ নং স্বারকমূলে মোটরযান পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অথচ অনেক দক্ষ মোটরযান পরিদর্শক দেশের অনেক ছোট সার্কেলে রয়েছে, তাদের অনেকে ঢাকার সার্কেল গুলোতে বদলী হওয়া ও চাকরি করাকে স্বপ্ন মনে করেন।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের সাথে যোগাযোগ করে প্যাসেঞ্জার ভয়েস। তিনি বলেন, যে সকল কর্মকর্তাদের পদায়নস্থলে তিন বছর পার হয়েছে আমরা তাদের নীতিমালা অনুযায়ী বদলী করছি। রাতারাতি বদলী আদেশ পরিবর্তন কিভাবে হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ কাউকে বদলী করার পরে সে যদি তার পারিবারিক কোন সমস্যা উপস্থাপন করে পরিবারের পাশ্ববর্তী কোন সার্কেলে বদলী হতে চায় তখন মানবিক বিবেচনায় তার বদলী আদেশ পরিবর্তন করা হয়। 

বিআরটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলী ও পদায়ন নীতিমালা ও গাইডলাইনে কি আছেঃ

২০১৮ সালের ২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের গেজেট অনুযায়ী বিআরটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়ন ও বদলীর ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়, কর্মপরিসর, অবকাঠামোগত অবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সুবিধাদি বিবেচনায় বিআরটিএ অফিস/সার্কেল গুলোকে ক, খ, গ, ঘ, ৪ (চার) টি ক্যাটাগরিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এবং সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ্য আছে একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনা সার্কেলে চাকরিকাল ৩ বছর, পাবর্ত্য চট্টগ্রামে চাকরিকাল ২ বছর হলে এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের “ক” ক্যাটাগড়িতে থাকলে থাকে “ঘ” ক্যাটাগড়িতে বদলী করতে হবে। একই ভাবে “ঘ” ক্যাটাগড়ি থেকে “গ” ক্যাটাগড়ি তারপর “খ” ক্যাটাগড়িতে বদলী করতে হবে। 

তবে প্রজ্ঞাপনের ৪ নং কলামে বলা হয়েছে যৌক্তিক প্রয়োজনে বিআরটিএর সুপারিশের প্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পূর্বানুমতি গ্রহণ করে ক্যাটাগরি চক্রের বাহিরে বদলী ও পদায়ন করা যাবে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর কর্মকর্তারা রাতারাতি বদলী আদেশ পরিবর্তন করে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে কোন  নীতিমালাও মানা হয়না বলে অনেক কর্মকর্তাদের দাবী।

সাম্প্রতিক বদলী আদেশ গুলো পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, মোটরযান পরিদর্শক বশির উদ্দিন আহম্মেদ (পরিচিতি নং-২০০৪৩২০০৪১) তিনি “ক” ক্যাটাগরির বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো সার্কেল-১ এ পদায়িত ছিলেন, তাকে প্রথমে নোয়াখালী সার্কেলে ও পরে টাঙ্গাইল সার্কেলে বদলী করা হয়। অথচ এই দুইটি সার্কেল বিআরটিএর নীতিমালা অনুযায়ী “খ” ক্যাটাগরি। অথচ প্রজ্ঞাপনে আছে “ক” ক্যাটাগরি থেকে “ঘ” ক্যাটাগরিতে বদলী হওয়ার কথা তার।  মোটরযান পরিদর্শক সালেহ আহম্মদ (পরিচিতি নং-২০১৪২০০০৫৮) তিনিও ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলে ছিলেন তাকেও নীতিমালা না মেনে “খ” ক্যাটাগরিতে বদলী করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মেরাজুল ইসলাম (পরিচিত নং-২০১৭৩২০১৩১) তার সার্কেল ছিল “ক” অথচ তাকে প্রথমে “খ” পরে “গ” ক্যাটাগরির মাদারীপুর-শরীয়তপুর সার্কেলে বদলী করে। 

তবে নীতিমালা মেনে যাদের বদলী হয়েছে তারা হলেন মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট সৌরভ কুমার সাহা (পরিচিতি নং ২০১৪৩২০০৯০) “ক” ক্যাটাগরি থেকে “ঘ” ক্যাটাগরিতে। এছাড়াও মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মো. সোহেল মিয়া (পরিচিতি নং-২০১৭৩২০১৩৪), মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট রাশেদ মিয়া (পরিচিতি নং-২০১৪৩২০০৮৯), মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট জিয়া উদ্দিন (পরিচিতি নং-২০১৫৩২০১০৪)।